প্রতিদিন গোসল না করলে কি হয়

আমরা গোসল কেন করি? আর প্রতিদিন গোসল করা কি দরকার? আজ, এই সব প্রশ্নের উপর থাকছে এই ব্লগে। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি যে রোজ সকালে এবং বাহিরে কাজ থেকে এসে গোসল করা। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রতিদিন যদি আমরা ২/৩ বার গোসল করি আমাদের শরীরের রুক্ষতা বেরে যায় ফলে, শরীরে যতটুকু তেল থাকার প্রয়োজন সেটাও থাকে না। তাহলে কি আমরা প্রতিদিন গোসল করা জরুরি না?
প্রতিদিন গোসল করাটা কি জরুরি?
তা আসলে আপনার পরিবেশ ও ত্বকের ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি অতিরিক্ত ঘামেন, ময়লা কিংবা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন গোসল করাই উচিত। কিন্তু ওপরের কোনোটিই যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়, তাহলে প্রতিদিন আপনার গোসল না করলেও চলবে। কিন্তু ঠিক কত দিন পরপর গোসল করতে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের কথা বিশেষজ্ঞরা বলেননি।
ত্বকের ধরন অনুসারে দুই দিন বা তিন দিন পরপরও গোসল করতে পারেন।
কিন্তু ত্বকের ব্যাপারটা কী?
সব মানুষের শরীর থেকে একধরনের প্রাকৃতিক তেল নিঃসৃত হয়। এই তেলের কারণে আমাদের মুখ মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকে। তবে সবার ত্বকের তেল নিঃসরণের হার সমান নয়। কারও বেশি নিঃসৃত হয়, কারও কম। তেল নিঃসৃত না হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। খসখসে লাগে মুখ। এ ছাড়া আমাদের ত্বকের বাইরে কিছু ভালো জীবাণু থাকে।
নিয়মিত গোসলের কারণে ত্বকের সেই ভালো জীবাণুও ধুয়ে, মুছে সাফ হয়ে যায়। কমে যায় ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
এ ছাড়া গোসল করার সময় আমরা সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করি। সাবানে থাকে সোডিয়াম লরেল সালফেট, সোডিয়াম লরিথ সালফেট, ফর্মালডিহাইড, হেক্সাক্লোরোফিনসহ আরও অনেক উপাদান। এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সোডিয়াম লরেল সালফেটের কারণে সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিজের ত্বককে বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিৎ।
কতবার গোসল প্রয়োজন?
প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও সপ্তাহে ঠিক কতবার গোসলের প্রয়োজন তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। ত্বকের ধরণের ওপর ভিত্তি করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন কিংবা বা এক/দুই/তিন দিন পরপর গোসল করা যেতে পারে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এক বা দুই দিন পরপর, আর যাদের ত্বক শুষ্ক তারা সপ্তাহে এক বা দুই দিন গোসল করতে পারেন। তবে, যাদের ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করেন কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে কাজ করেন তাদের প্রতিদিনই গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন না থাকলেও হাত এবং মুখ পরিষ্কার করা এবং অবশ্যই ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
কীভাবে গোসল করবেন?
• কুসুম গরম পানি দিয়ে দ্রুত গোসল শেষ করুন।
• গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় এবং তেলযুক্ত সাবান ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন শরীরের সবস্থানে এবং প্রতিবার গোসলেই সাবানের প্রয়োজনীয়তা নেই। হাত, মুখ, বগল ও উরু এলাকায় সাবান ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচন করুন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে পারেন।
• গোসলের সময় বেশি জোরে ত্বক ঘষবেন না। এজন্য নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
• গোসল না করলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে পারেন।
• গোসলের পর নিজের পছন্দ মত বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মনে রাখতে হবে শীতকালে আমাদের ত্বক শুষ্ক থাকে। তাই প্রতিদিন গোসল নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বরং প্রতিদিন গোসল না করাই স্বাস্থ্যকর। অবশ্য এজন্য ধুলা-বালি এবং স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি একবারে গোসল না করলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাই প্রতিদিন গোসল না করলে হাত, পা এবং মুখ নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং যত্ন নিন।
সারমর্ম
যারা ঘরে থাকেন বা ঘরে থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন তাদের প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন হয় না। কারণ ত্বক স্বাভাবিক হলে, ঘাম কম হয়, শরীরে ময়লা জমে কম এবং দুর্গন্ধ ছড়ানোর ঝুঁকিও কম। অন্যদিকে যারা বাইরে যান, অনেক মানুষের সাথে মেশেন, শরীরে ঘাম জমে, ময়লা হয়, তাদের গোসলের প্রয়োজন ঘরে থাকাদের চেয়ে বেশি।